ধানের ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট (Bacterial panicle blight) এবং এর প্রাদুর্ভাবের আশংকা

  Penical Blight of Rice

রোগের কারণঃ

Burkholderia glumae নামক এক ধরণের ব্যকটেরিয়া। ব্যকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট ব্যকটেরিয়া জনিত দানা পঁচা রোগ বা দানা ঝলসানো নামেও পরিচিত। ব্যাকটেরিয়াটি হলুদ পিগমেন্টেড বিষাক্ত টক্সোফ্লাভিন উপাদান নিঃসৃত করে ফলে এই রোগ ছড়ায় এছাড়া আদ্রর্তা ৮০ শতাংশের উপরে, খুব ঘন আকারে চারা রোপন ও অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার এ রোগের প্রার্দুভাব বাড়ায়।

রোগের লক্ষণঃ

এই রোগে পূর্বকোন সতর্কতা ছাড়াই লক্ষণ গুলোর উপস্থিতি দেখা যায়। শিষের ছোট ছোট ধান গুলো সঠিকভাবে দানা বাধতে পারে না এবং চিটা হয়ে যায় তবে শিষের সকল দানা গুলো চিটা হয় না। আক্রান্ত ধানের দানা গুলো ধূসর/কাল/গোলাপী রং ধারণ করে।
শিষে চিটা হওয়ার ফলে ওজন থাকে না বিধায় শিষগুলো খাড়া হয়ে থাকে। সংক্রমিত শিষের নিচের অংশ সবুজ থাকে। মাঝে মাঝে খোলপচা বা চারা ঝলসানো রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি জায়গায় এক বা একাধিক গাছে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

 

কিভাবে ছড়ায়ঃ

ব্যকটেরিয়াগুলো ধানগাছের পাতা এবং খোলে অবস্থান করে এবং তারা প্রতিকুল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। ধানগাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যকটেরিয়াগুলো গাছের উপরের দিকে উঠতে থাকে। ব্যকটেরিয়া টি ধানের শিষ বের হওয়ার সাথে সাথে সেখানে আক্রমন করে। ফুলের রেনূ গুলো নষ্ট করে ফলে ধানের দনা গুলো চিটাতে পরিনত হয়। ব্যকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট সাধারণত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়াতে বেশি ছড়ায়। যখন দিনের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপরে এবং রাতের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে এরকম আবহাওয়া এই রোগ ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত। এছাড়া অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ব্যবহার এই রোগের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

বাহকঃ

ব্যকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট একটি বীজ বাহিত রোগ। রোগ আক্রান্ত বীজ হতে চারা উৎপাদন করে আবাদ করলে তা নিয়ন্ত্রনের বাস্তবিক কোন উপায় নেই।

BPB দমনে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনাঃ

১. আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি যেমন বীজ বপনের পূর্বে তা শোধন করা।
২.বীজ বপনের পূর্বে ৫ থেকে ৬ দিন কড়া রোদে বীজ শুকিয়ে নেওয়া।
৩.অক্সালিনিক এসিড দিয়ে বীজ শোধন করা। (বাংলাদেশে এ জাতীয় বালাইনাশক বাজারে নেই)
৪.রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষাবাদ করা। জাপান ইতোমধ্যে ৯ টি এবং আমেরিকা ৬ টি BPB প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করেছে।
৫. অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা।
৬. কপারঅক্সিক্লোরাইড (কপার ব্লু) , কাসুগামাইসিন (কাসুমিন ২%) , বিসমার্থিওজল (ব্যকট্রোবান), ক্লোরোআইসোব্রমাইন সায়ানুরিক এসিড (ব্যকটাফ) (বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়) এ জাতীয় বালাইনাশক প্রয়োগ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।

Scroll to Top